Thursday, April 16, 2020

Kushi Prangoner Chithi


প্রসঙ্গকুশী প্রাঙ্গনের চিঠি’: বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়

ড. শ্রীকান্ত কর্ম্মকার

শতাব্দী পূর্বে বিহার বাংলার সঙ্গেই যুক্ত ছিল ১৯১২ সাল থেকে স্বতন্ত্র প্রদেশ হিসাবে পরিচয় লাভ করে বিহার বাংলা থেকে আলাদা হলেও বিহার কখনো বাংলাকে বা বাংলা কখনো বিহারকে আলাদা বলে ভাবতে পারে না বংশপরম্পরায় কয়েক শতাব্দী ধরে বাঙালিরা ভাগলপুর, পূর্ণিয়া, কাটিহার প্রভৃতি অঞ্চলে বাস করে আসছেন বাঙালি থাকার সাথে সাথে এখানে বাংলা ভাষার প্রচলন আছে এবং এবং বিহারকে কেন্দ্র করে অনেক উৎকৃষ্ট সাহিত্যের সৃষ্টি হয়েছে জন্ম হয়েছে অনেক বাঙালি সাহিত্যিকের তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়
এখন আমরা বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে আলোচনা করব মিথিলার অন্তর্গত পাণ্ডৌল গ্রামে ১৮৯৪ সালে বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম দ্বারভাঙ্গা রাজস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন এরপর রিপন কলেজ থেকে আই এ পাশ করেন পাটনা কলেজ থেকে তিনি বি এ পাশ করেন ১৯১৫-১৬ সালের আষাঢ় মাসে প্রবাসীর গল্প প্রতিযোগিতায় বিভূতিভূষণঅবিচারগল্পলিখে পুরস্কার লাভ করেন
বিভূতিভূষণেরকুশী প্রাঙ্গনের চিঠি১৩৭২ বঙ্গাব্দে বৈশাখ মাসে প্রকাশিত হয়েছেকুশীবিহারের একটা গুরুত্বপূর্ণ নদীকুশীবিহারেকোশীনামে পরিচিত বিহারের কুশী এলাকা কথা লিখেছেন এই ভ্রমণ মূলক কুশী সম্পর্কে এই গ্রন্থে আমরা পৌরাণিক ঘটনার কথা জানতে পারি –“দুই বোন ফুল তুলতে গিয়ে কিসোরীসুলভ খেলায় মত্ত হয়ে ভুলে গেছেন সব, এদিকে মহর্ষি পূজার বিলম্ব হয়ে যেতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছেন দুজনে উপস্থিত হলে শাপ দিলেনতোর দুই বোন নদীরূপ গ্রহন করে পরম্পরা হতে এত সুদূর হয়ে পড়বি যে, আর সাক্ষাৎকার হবে নাসেই থেকে কৌশিকী আর কমলা এই দুই বোনের মাঝখানে সুদূর ব্যবধান অনেক কান্নাকাটির পর ঋষি যে কৃপাপরবশ হয়েছিলেন, তাইতে তাঁরই বিধানমতো কৌশিকী শত বৎসরে একবার করে যান পশ্চিমে কমলার দিকে এগিয়ে- দুই বোনের দেখা হয় - ওঁদের মিলনের ভৈরব আনন্দের অর্থ মিথিলা সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে- ”
কুশীর সামগ্রিক রূপ লেখক এখানে তুলে ধরেছেন কুশীর সঙ্গে সঙ্গে সেখানের জনজীবনের কথা লেখক বলেছেনকুশীর এলাকা থেকেই আসল মিথিলার শুরু দুটো মহকুমা ষোলোটা থানা নিয়ে চার হাজার বর্গমাইলের বিরাট কুশী প্রাঙ্গন পূর্বে ভাগলপুরের সাথে ছিল পরে সাহারসাকে কেন্দ্র করে আলাদা জেলা হয়েছে এই বইয়ের মধ্যে উগ্রতারা দেবীর মন্দিরের কথা জানতে পারি, মণ্ডনা মিশ্র আর তার স্ত্রী উভয়ভারতী এবং শঙ্করাচার্যের কথা পাই, সিংগিওয়ালা নামে এক বাঙালী গ্রামের পরিচয় পাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কুশীর রূপ পরিবর্তনের কথা লেখকের মুখথেকেই জানতে পারি গ্রীষ্মের সময় তার এক রূপ আবার বর্ষার সময় তার অন্য রূপ কুশী আমার কাছে সত্যিই একটা যেন সজীব সত্ত্বা হয়ে দাঁড়িয়েছেযা আমার দেখাচ্ছেশোনাচ্ছে তার মধ্যে যেন একটি বেশ প্ল্যান, ওর ধ্বংসের লীলা যেন সইয়ে সইয়ে দেখাচ্ছে আমায়অন্তরীক্ষে কোথায় বসে যেন একটি একটি করে দৃশ্যপট দিচ্ছে তুলেউগ্র আরও উগ্র, তারপর আরও উগ্র 

গ্রন্থঋণঃ-
কুশী প্রাঙ্গনের চিঠি, বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্র লাইব্রেরী, কলকাতা, ১৩৭২ বঙ্গাব্দ
বিহারে বাংলা সাহিত্য, নন্দদুলাল রায়, বিহার বাংলা আকাডেমি, পাটনা, ১৯৮৯
 বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মডার্ণ বুক এজেন্সি, কলকাতা, ২০০৭